দাম বাড়ছে বিভিন্ন পণ্যের

রঞ্জু আহমদ ঃ করোনাভাইরাসের নেতবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে খুলনার বাজারে। খাদ্যপণ্য সহ ভোক্তার ব্যবহার্য অনেক পণ্যই চীনের সাথে আমদানী-রপ্তানী কমে গেছে। ফলে ওইসব পণ্যগুলোর দাম বেড়েই চলেছে। নিত্যপণন্য, ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি, তৈরি পোশাক, মেশিনারি পণ্য ও ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের দাম বাড়তির দিকে। তাই এ সব পণ্য কিনতে ভোক্তার বাড়তি ব্যয় হচ্ছে। এদিকে বাংলাদেশ থেকেও রপ্তানীযোগ্য বিভিন্ন পণ্য রপ্তানীতেও ভাটা দেখা দিয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে মেশিনারিজ, কাপড়, কেমিক্যালসহ পোশাক খাতের অনেক কাঁচামাল আসে চীন থেকে। করোনাভাইরাসের কারণে এসব পণ্যের আমদানির পরিমাণ অনেক কমে গেছে। এতে দেশীয় কারখানাগুলোতেও উৎপাদনে ব্যাহত হচ্ছে।
নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চীন থেকে আমদানিকৃত আদা বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকা কেজি দরে। যা তিন সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১২০-১৩০ টাকা কেজি। রসুন বিক্রি হয়েছে ২০০-২২০ টাকা। যা তিন সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১৪০-১৫০ টাকা।
এছাড়া চীন থেকে আসে বিলাসী বেশ কয়েক ধরনের খাদ্যপণ্য। চীন থেকে আমদানি করা এসব পণ্যের এখন জোগান কম বলছেন বিক্রেতারা। এর মধ্যে বেবি কর্ন, সুইটকর্ন, ফিশ সস, মাকুরা সস, মাশরুমসহ এসব পণ্যের সরবরাহ কম থাকায় বাড়ছে দাম।
বড় বাজারের বিক্রেতা মো. ইসলাম মোড়ল বলেন, চীন থেকে বর্তমানে আদা, রসুন ও পেঁয়াজ আসছে না। যে কারণে আমদানিকারক ও পাইকারি বিক্রেতারা বেশি দরে বিক্রি করছে। আর বেশি দাম দিয়ে কিনে আমাদেরও বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
নগরীর কেডি ঘোষ রোডের ঘড়ি ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বলেন, ঘড়ির অর্ডার দেওয়া আছে প্রায় মাস খানেক আগে। এখনও আসেনি। কবে নাগাদ আসবে তাও জানি না। তিনি বলেন, যে ঘড়ি ২ হাজার টাকায় বিক্রি করতাম তার দাম এখন বেড়ে দাড়িয়েছে তিন হাজার টাকায়।
বাজারে চায়নায় তৈরি টিভির বেশ কদর রয়েছে। নগরীর হার্ড মেটাল গ্যালারীর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ৩২ ইঞ্চি এলইডি টিভি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায় পাওয়া গেলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকায়।
মার্কেটের বিক্রেতারা বলছে, আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে মালামাল নেই। তারা হঠাৎ করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা বলছেন, চীনে করোনাভাইরাসের আক্রমণের কারণে দেশটি থেকে ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য আসছে না। যে কারণে দাম বাড়তি। এতে আমাদের বেশি দাম দিয়ে এনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এদিকে বাজারে বর্তমানে চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের পাশাপাশি অন্য প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তি। এ প্রসঙ্গে একাধিক ক্রেতা অভিযোগ করে বলেন, ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফার জন্যই বাজারে গুজব ছড়িয়েছে, চীন থেকে পণ্য আমদানি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকবে। এভাবে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে। এমনকি গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজ, আদা, রসুনসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম কয়েক ধাপে বাড়িয়েছে তারা।
অপরদিকে খুলনাঞ্চল থেকে রপ্তানী করা হয় কাঁকড়া ও কুঁচে। সেটিও এখন রপ্তানী বন্ধ হয়ে গেছে। খামারিরা জানান, খুলনা অঞ্চলের প্রায় ২৫ হাজার ছোটো-বড়ো খামারে কাঁকড়া ও কুঁচের চাষ হয়। স্বাভাবিক সময় প্রতিদিন এসব খামার থেকে ২৫ টন কাঁকড়া ও ১০ টন কুঁচে ঢাকার রপ্তানিকারকদের কাছে পাঠানো হয়। এখন এই কাঁকড়া ও কুঁচে খামারে মজুদ রয়েছে। ইতোমধ্যে খামারের ৮০ ভাগ কাঁকড়া ও কুঁচে মারা গেছে।
খামারী আব্দুল্লাহ হোসেন জানান, যে কাঁকড়া কেজি প্রতি ১৮শ’ টাকা থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হতো সেই কাঁকড়া এখন ৩০০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হচ্ছে না। ফলে খামারিরা কর্মচারীদের বেতনও দিতে পারছে না।