# মায়ের জানাযা শেষে জানলেন শিশু সন্তানও আক্রান্ত

এ এইচ হিমালয় ঃ বাবা-মা দুই জনের শরীরে করোনা উপসর্গ ছিলো। মা শামীম আরা বেগমের (৬৫) শারীরিক অবস্থা অবনতি হওয়ায় গত ৬ জুলাই খুলনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসা চলছিলো তার।
বাবা সৈয়দ আজাদ আলী (৭৮) হাসপাতালে যেতে রাজি হননি। নগরীর মিয়াপাড়া প্রধান সড়কের নিজ বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। বাবা-মায়ের চিকিৎসার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন সন্তানরা।
কিন্তু সবাইকে কাঁদিয়ে গত ৭ জুলাই রাত তিনটায় মিয়াপাড়ার বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন শেখ আজাদ আলী। বাবার মৃত্যুর খবরটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মায়ের কাছে গোপন রাখেন সন্তানেরা। চলে জানাযা ও দাফনের প্রস্তুতি। ৮ জুলাই বাদ যোহর মিয়াপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে শেখ আজাদ আলীর জানাযা শেষে টুটপাড়া কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।
দাফন শেষে বাড়ি ফেরার পর হাসপাতাল থেকে ফোন আসে মাও ইন্তেকাল করেছেন। বাদ মাগরিব একই মসজিদে শামীম আরা বেগমের জানাযা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। রাতে তাকেও টুটপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়।
করোনাভাইরাসে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাবা-মা হারানো হতবিহ্বল পরিবারটি আতংকে রয়েছে পরিবারের ছোট দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে।
হৃদয় বিদারক এই ঘটনা নগরীর টুটপাড়া প্রধান সড়কের। অবসরপ্রাপ্ত বাবা এবং গৃহিনী মা, নিজের স্ত্রী এবং দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে সুখের সংসার ছিলো চাকরিজীবী সৈয়দ জুলফিকার আলীর। এলাকায় জুলু নামেই তিনি সবার কাছে পরিচিত। করোনাভাইরাসের ভয়াল ছোবল তছনছ করে দিয়েছে তার সুখের সংসার।
জুলুর বাবা সৈয়দ আজাদ আলী হাস্যজ¦ল, মিষ্টভাষী ও ভালো মানুষ হিসেবে এলাকার কিশোর-যুবক-বৃদ্ধ সবার কাছে পরিচিত মুখ। মা শামীম আরা বেগমও ছিলেন এলাকার নারীদের আপনজন। একই দিনে প্রিয় দুই মানুষকে হারিয়ে মিয়াপাড়া এলাকাবাসীও শোকে মুহ্যমান। আর বাবা-মা হারিয়ে জুলফিকার আলী জুলু এখন পাগল প্রায়। গতকাল কয়েকবার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
পরিবার থেকে জানা গেছে, সৈয়দ আজাদ আলী ও শামীম আরা বেগমের এক ছেলে ও এক মেয়ে। বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন ছেলে জুলফিকার আলী। মেয়ের বিয়ে হয়েছে।
বাবা-মা মারা যাওয়ার পর জুলফিকার আলী দুই শিশু সন্তান নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন পরিবারটি। ইতোমধ্যে সব ধরনের উপসর্গ দেখা দিয়েছে এক শিশুর শরীরে। প্রয়াত বাবা-মায়ের রুহের মাগফেরাত এবং পরিবারের শিশুদের রোগমুক্তি কামনায় সবার কাছে দোয়া চেয়েছে পরিবারটি।