রঞ্জু আহমদ ঃ খুলনার রূপসা উপজেলায় ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যেই গড়ে উঠেছে কার্বন ফ্যাক্টরী। বায়ু ও পানি দূষনে ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে মানুষের জীবনযাত্রা। নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। প্রায় ৫ বছর ধরে অনুমোদনহীন এ কারখানা চললেও প্রশাসন নিরব। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পায়নি এলাকাবাসী।
জানা গেছে, রূপসা উপজেলার নৈহাটী ইউনিয়নের তীলক গ্রামে ৪/৫ বছর আগে প্রায় ১০ একর জায়গার ওপর একটি কারখানা গড়ে ওঠে। কারখানার নাম মিমকো কার্বন ফ্যাক্টরী। এ কারখানায় কাঠ এবং পাটকাঠি পুঁড়িয়ে কয়লা তৈরি করা হয়। সেই কয়লা গুড়ো করে প্রক্রিয়াজাত করে করা হয় কার্বন। এলাকাবাসীর পাশাপাশি কারখানার আশে পাশে মোঃ সালেহীন প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় পরিচর্যা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, মহিলা কলেজ, গার্লস স্কুলসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র/ছাত্রীরাও এ দূষনের শিকার। নানা রকম রোগ ছড়াচ্ছে কারখানার ধোঁয়ায়। বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাননি বলে দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ফ্যাক্টরীর পাশ ঘেঁষেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আশরাফুল জাকারিয়া কওমী মাদ্রাসা। মাদ্রাসায় ৮০ জন ছাত্র পড়াশোনা করছে। কারখানা চালু হলে ধোঁয়ায় ছাত্ররা আর ক্লাশে বসতে পারে না। অনেক সময় ক্লাশ বন্ধ করে ছুটি দিয়ে দেন অধ্যক্ষ।
এ প্রতিষ্ঠানের সুপার মোঃ আহসান উল্লাহ বলেন, ফ্যাক্টরীটি একেবারে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়। সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চালু থাকে এটি। যখন চালু হয় তখন ধোঁয়ায় ভরে যায় পুরো এলাকা। শীতকালে উত্তরের বাতাসে ধোঁয়া সরাসরি মাদ্রাসায় প্রবেশ করে। সে সময় ছাত্ররা ক্লাসে বসতে পারে না। বাধ্য হয়ে ছুটি দিয়ে দিতে হয়। গত বছর কয়েকজন ছাত্র অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের চিকিৎসা দিতে হয়েছে। তিনি ফ্যাক্টরীটি বন্ধের দাবি জানান।
ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বর এস এম আলমগীর হোসেন শ্রাবন বলেন, যখন কারখানাটি গড়ে ওঠে সেসময় আমরা গ্রামবাসীরা মিলে প্রতিবাদ করেছিলাম। পুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাইনি। পরে নিরাশ হয়ে এলাকাবাসী আর কোন উদ্যোগ নেয়নি। তিনি বলেন, এ ফ্যাক্টারীর কারনে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হতে বসেছে। এর ধোঁয়া ও ছাইয়ের কারনে আশপাশের গাছ গাছালিতে ফল ধরা কমে গেছে। গাছগুলোতে ছোট কীটপতঙ্গ বসতে না পারায় পরাগায়ন কমেছে। পুকুর ও চিংড়ির ঘেরে মাছের উৎপাদন কমেছে। সব জলাশয়ে পানির উপরে সব সময় ছাইয়ের একটি প্রলেপ পড়ে থাকে। ফলে মাছ অক্সিজেন নিতে পারে না। বেশিরভাগ জমির ধান চিটে হয়ে যাচ্ছে। তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
গত ৬ জানুয়ারী কারাখানায় গিয়ে দেখা যায়, কারখানার গেটে মাত্র একজন দারোয়ান বসে আছেন। কারখানার অফিস কক্ষে বসে একজন কাজ করছেন। কথা বলতেই জানালেন- তিনি এখানকার ম্যানেজার। তার নাম মোঃ সোহাগ। এ প্রতিবেদক নিজের পরিচয় দিতেই তিনি- কারখানার বিষয়ে কোন কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে তিনি অফিস কক্ষের দরজা বন্ধ করে চলে যান।
কারখানার বিষয়ে খুলনা-৪ আসনের এমপি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর বড় ভাই আজাদ আবুল কালাম বলেন, এ কারখানার জন্য স্থানীয় মানুষ অতিষ্ঠ। কারখানার মালিককে কখনও পাওয়া যায় না। অদৃশ্য ক্ষমতাবলে কারখানাটি এখানো চলমান রয়েছে। প্রশাসেনর কাছে ধর্না দিয়েও কোন সুফল পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, খুলনা জেলার মধ্যে রূপসাতে প্রতিবন্ধী ছেলে মেয়ের সংখ্যা বেশী। শুধু নৈহাটী ইউনিয়নে ১৪শ’র মত প্রতিবন্ধী ছেলে মেয়ে রয়েছে। এসব দূষনের কারণেই প্রতিবন্ধী ছেলে মেয়ে জন্ম নিচ্ছে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
লোকলয়ের মধ্যে কারখানা তৈরির বিষয়ে জানতে চাইলে রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার বলেন, রূপসায় এমন কোন কারখানা রয়েছে সেটি আমি জানিনা। এখানে যোগদানের পরে কেউ আমাকে জানায়নি। আমি এ বিষয়ে অবশ্যই পদক্ষেপ নেবেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সাইফুর রহমান খান বলেন, লোকালয়ের মধ্যে এমন কোন কারখানার অনুমোদন পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে দেয়া হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।