#ভারী বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন বাঁধাগ্রস্ত, ডুবে যাচ্ছে নগরী#খাল থেকে বাঁধ অপসারণের কেডিএকে চিঠি#জলাবদ্ধতা নিরসনে ৩টি মোবাইল টিম গঠন কেসিসির
এ এইচ হিমালয় : নগরীর লবণচরা, বান্দাবাজার, মতিয়াখালী, শিপইয়ার্ড ও টুটপাড়ার একাংশের পানি নিষ্কাশন হয় লবণচরা, ক্ষেত্রখালী ও মতিয়াখালী খাল দিয়ে। গত প্রায় এক বছর ধরে খাল ৩টির মুখে বাঁধ দিয়ে সেতু ও ¯øুইসগেট নির্মাণ করছে কেডিএর নিয়োগ দেওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহাবুব ব্রাদার্স। গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির পানি খাল দিয়ে নিষ্কাশন হতে পারেনি। ফলে বৃষ্টির পানিতে ডুবেছে ওই এলাকার বাসিন্দারা।
নগরী নিরালা ও প্রান্তিক আবাসিক এলাকাসহ আশপাশের বড় একটি এলাকার পানি নিষ্কাশন হয় নিরালা খাল দিয়ে। প্রায় একবছর ধরে ওই খাল ভরাট করে সেতু নির্মাণ করছে কেডিএর নিয়োগ পাওয়া আরেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডিয়েন কো লিমিটেড। ভরাট অংশের ভেতরে বেশ কয়েকটি পাইপ দেওয়া হলেও সেই পাইপ দিয়ে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন হয় না।
শুধু এই তিনটি নয়; কেডিএর বাস্তুহারা থেকে আড়ংঘাটা সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য বাঁধ দেওয়া হয়েছে বাস্তুহারা খাল ও দেয়ানা চৌধুরী খালে। এসব খাল দিয়ে এখন পানি নিষ্কাশন বাঁধগ্রস্ত হচ্ছে। যার কারণে ভারী বৃষ্টিতে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে আশপাশের এলাকা।
শুধু কেডিএই নয়; ড্রেন ও কালভার্ট নির্মাণ করতে গিয়ে বাঁধ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আরও অন্তত ১০টি ড্রেন। খুলনা নগরীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খানজাহান আলী রোডের ৪ নম্বর ড্রেনের এক কিলোমিটারে বাঁধ দেওয়া হয়েছে তিনটি। অস্থায়ীভাবে তৈরি এসব বাঁধ সময়মতো অপসারণ না করায় বৃষ্টির পানি নামতে পারেনি। ফলে গত তিন দিনের বৃষ্টিতে ডুবছে খুলনা নগরীর সড়কসহ বিভিন্ন এলাকা। গতকাল বুধবার তুলনামূলক কম বৃষ্টি হলেও মোল্লাপাড়া, মহিরবাড়ি খাল পাড়, মুজগুন্নী, আড়ংঘাটার বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে ছিল।
আবহাওয়া অফিস থেকে জানা গেছে, গত সোমবার রাত থেকে খুলনায় বৃষ্টি শুরু হয়। সোমবার রাত ১২টা থেকে পরদিন মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৬৩ মিলিমিটার, পরের ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। দুই দিনের বৃষ্টিতে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ও নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে গেছে।
কেসিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কোহিনুর জাহান বলেন, অপরিকল্পিতভাবে তৈরি বাঁধের কারণে বৃষ্টির পানি নামতে ধীরগতি তৈরি হয়। মঙ্গলবার থেকে বাঁধ অপসারণ কাজ শুরু হয়েছে। বুধবার বুধবার দুটি স্কেভেটর দিয়ে মতিয়াখালী ও ক্ষেত্রখালী খালের পেড়িমাটি ও বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বাঁধ কাটা ও পানি নিষ্কাশন সহজ করতে প্রকৌশল বিভাগ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একসঙ্গে কাজ করছে।
কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার জলাবদ্ধ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছি বাঁধের কারণে পানি নিষ্কাশন বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। কেডিএর ঠিকাদারের নির্মাণ করা ৫টি বাঁধ অপসারণের জন্য বুধবার কেডিএ চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছি।
এ ব্যাপারে কেডিএ চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহাংগীর হোসেন বলেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য আমরা সবাই একযোগে কাজ করছি। দ্রæত সময়ের মধ্যে মতিয়াখালী ¯øুইসগেটের কাজ শেষ হবে। লবণচরায় জোয়ারের কারণে বড় একটা সময় পানি নিষ্কাশন বন্ধ রাখতে হয়। তখন কিছুটা সমস্যা হয়।
তিনি বলেন, বাঁধ দিয়ে কোথাও সরাসরি পানি প্রবাহ বন্ধ করা হয়নি। বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভারী বৃষ্টি হলে তখন কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এরপর ভারী বৃষ্টি হলে প্রয়োজনে পাম্প চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
\ কেসিসিতে জরুরী সভা \
জলাবদ্ধতা দূর করতে কেসিসি’র পুরকৌশল ও কঞ্জারভেন্সী বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণে এক সভা নগর ভবনের জিআইজেড মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান।
সভায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে ১ থেকে ১৫নং ওয়ার্ড এলাকার জন্য সহকারী প্রকৌশলী ওবায়দুল্লাহ খানকে প্রধান করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট; ২২, ২৩ ও ২৯নং ওয়ার্ড এলাকার জন্য উপসহকারী প্রকৌশলী অমিত কান্তি ঘোষকে প্রধান করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট এবং ২৭, ২৮, ৩০ ও ৩১নং ওয়ার্ড এলাকার জন্য উপসহকারী প্রকৌশলী শেখ নজরুল ইসলামকে প্রধান করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট ৩টি মোবাইল টিম গঠন করা হয়। এছাড়া টিমের মূল সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মোঃ মাসুদ করিম এবং কনজারভেন্সি অফিসার মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান খান।
সভায় নিজ নিজ এলাকায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতার স্থানে জনবল ও যন্ত্রপাতিসহ উপস্থিত হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য টিমের সদস্যগণকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া টিমের সদস্যগণকে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রæপের মাধ্যমে নিজ নিজ এলাকার জলাবদ্ধতার কারণ ও প্রতিকারের প্রস্তাব লিপিবদ্ধ করারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ড্রেনের চলমান উন্নয়ন কাজ শেষ হওয়ার পর পানি নিস্কাশনে প্রতিবন্ধকতা আছে কিনা সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কনজারভেন্সি সুপারভাইজারের মতামত গ্রহণের পাশাপাশি নির্মাণাধীন প্রতিটি ¯øুইসগেটে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সভায় প্রধান প্রকৌশলী জলাবদ্ধতার বিষয়ে কেসিসি’কে তথ্য প্রদানের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে কর্মরতদের সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহবান জানান।
কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান বলেন, কেসিসির উন্নয়ন কাজের জন্য তৈরি বাঁধ আমরা নিজ উদ্যোগ অপসারণ শুরু করছি। আগামীতে ভারী বৃষ্টি হলে মোবাইল টিমগুলো ট্রাকে করে কোদাল, শাবলসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে ড্রেন ও খালের বাঁধা অপসারণে কাজ করবে।