কুয়েট শিক্ষক সমিতির নতুন আলটিমেটাম
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(কুয়েট) শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে এবার আলটিমেটাম দিয়ে বলা হয়েছে ২৯ জুনের মধ্যে ভিসি নিয়োগ দিয়ে সংকট সমাধান না করা হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। মঙ্গলবারের সাধারণ সভার বরাত দিয়ে এমন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় ওইদিন দিবাগত গভীর রাতে। এছাড়া গত ২ মে থেকে ক্লাস চালুর কথা থাকলেও শিক্ষকরা সেই থেকে এখন পর্যন্ত ক্লাস বর্জন অব্যাহত রেখেছেন। এর আগে গত ১৮ ফেব্রæয়ারি থেকে কুয়েটে অচলাবস্থা চলছে। অর্থাৎ শিক্ষক সমিতির এমন হুমকিতে নতুন করে সংকটের দিকে পড়লো কুয়েট।
কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ৩ মে চুয়েটের প্রফেসর ডঃ মোঃ হযরত আলীকে অন্তবর্তীকালীন ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। অন্তবর্তীকালীন ভাইস চ্যান্সেলরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষকবৃন্দ, অনুষদের ডীন, ইনস্টিটিউট পরিচালক, বিভাগীয় প্রধান, হল প্রভোস্ট এবং অন্যান্য পরিচালকবৃন্দ সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সংবিধি ও বিধি-বিধান অনুসরণ করে চলমান সংকট নিরসনের পরামর্শ দেন। কিন্তু সংকট নিরসনে ভিসি দীর্ঘসূত্রিতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিসমূহ সঠিকভাবে অনুসরণ করার ক্ষেত্রে অনিহা পরিলক্ষিত হওয়ায় সাধারণ শিক্ষকবৃন্দ অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবি করে ৪ মে হতে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকেন।
এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গভীর সংকটকালীন সময়ে ভিসি দাপ্তরিক প্রয়োজন দেখিয়ে ১৯ মে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। ইতিপূর্বে দেখা গেছে, ভাইস চ্যান্সেলর ব্যক্তিগত অথবা দাপ্তরিক প্রয়োজনে কখনো ক্যাম্পাস ত্যাগ করলে প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা শিক্ষক এবং কর্মকর্তাবৃন্দকে চিঠি বা ইমেইল মারফত জানানো হত। অথচ অস্বাভাবিকভাবে এবার তার এই ক্যাম্পাস ত্যাগের বিষয়টি দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গকে অবহিত করা হয়নি।
তারপর থেকে এখন পর্যন্ত অভিভাবকহীন হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রয়েছে। একই সাথে ক্যাম্পাসে শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন ভাতা বন্ধসহ ক্যাম্পাসের সকল উন্নয়ন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। পরবর্তীতে ২৫ মে উদ্ভূত সংকট নিরসনে সিনিয়র টিম প্রফেসর ড. মোঃ আবুল কালাম আজাদ বিশ্ববিদ্যালয মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠি পাঠান। কিন্তু এখনও কোন সমাধান পাওয়া যায়নি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে গত ২৯ মে অপেক্ষা পরিচালনার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ ও নির্দেশনাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি প্রদান করলেও নির্দেশনার অভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ঈদের পূর্বে বেতন-বোনাস করতে পারেনি।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ঈদ পরবর্তী অফিস খোলার পরে বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেও মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে ভিসি নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি ৪ জুন প্রকাশিত হলে শিক্ষকবৃন্দ বিস্মিত হন। কেননা এহেন ঘটনা দেশে এটাই প্রথম। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যোগ্যতার মাপকাঠিতে এই ক্যাম্পাসে যেখানে ৬০ জনেরও বেশি প্রফেসর বিদ্যমান তথাপি মন্ত্রণালয়ের এই বিজ্ঞপ্তি একটি দীর্ঘসূত্রিতার পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এজন্য ২৯ জুনের মধ্যে ভিসি নিয়োগ করে সংকট সমাধানের আহবান জানিয়ে বলা হয়, অন্যথায় শিক্ষকরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।
অবশ্য শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভার একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। যেখানে একজন শিক্ষককে সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা সম্পর্কে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্পর্কে বিষদগার করতে শোনা যায়। এমনকি গণমাধ্যমকর্মী এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নাম উল্লেখ করেও উস্কানীমূলক বক্তব্য দেন কয়েকজন শিক্ষক।
অপর একটি সূত্র জানায়, শিক্ষক সমিতির সভাপতির কাছে ফোন দিয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান নিজে বলেছেন যে, ক্লাসে ফিরে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হোক। সব বিষয় তিনি দেখবেন। কিন্তু সে বিষয়টিও সাধারণ সভায় উত্থাপন না করে শুধুমাত্র ছাত্রদের বিরুদ্ধে শিক্ষক লাঞ্ছনার বিচার দাবি এবং সর্বশেষ ভিসি নিয়োগের দাবিতে তারা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
অপরদিকে, চলমান সংকটের কারণে কুয়েটের ছয় সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থীর জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে যারা সাড়ে পাঁচ বছর ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন, তারাসহ সকল শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। একইভাবে সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অভিভাবকরাও শংকায় রয়েছেন।