/ খুলনায় এক রাতে ২ খুন, ২ গুলিবিদ্ধ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ

খুলনায় এক রাতে ২ খুন, ২ গুলিবিদ্ধ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ

খুলনায় গত ২৬ জুন রাতের এক ভয়াবহ ঘটনায় রূপসা উপজেলার আইচগাতী ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে এক পক্ষের গুলিতে সাব্বির (২৭) নামের এক যুবক নিহত হন এবং দুই জন গুলিবিদ্ধ হন। একই রাতে মহানগরীর হরিণটানা থানাধীন রাজবাধ দক্ষিণপাড়ায় বালু ব্যবসায়ী বাবলু দত্ত (৫০) কে নির্মমভাবে গলা কেটে হত্যা করা হয়। খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ধারাবাহিক অবনতির ফলে জেলার মানুষের মধ্যে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

রূপসা উপজেলার রাজাপুরে গোলাগুলি ও নিহত-আহত
রূপসা থানার ওসি মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান জানান, গত ২৬ জুন রাত ৯টার দিকে রাজাপুর গ্রামের পপুলার এলাকায় ‘গ্রেনেড বাবু’ নামে পরিচিত এক সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যরা গোপন মিটিং করছিলেন। খবর পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী ‘আশিক’ গ্রুপ সেখানে গুলি চালায়। ঘটনাস্থলেই সাব্বির নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হন সাদ্দাম হোসেন (২৯) ও মিরাজ ওরফে কাউয়া মিরাজ (২৮)।
আহত সাদ্দামকে প্রথমে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ভর্তি করা হয়, পরে ঢাকা পাঠানো হয়। মিরাজ একটি প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে পালিয়ে যায়। নিহত সাব্বিরের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে দাফন প্রক্রিয়া চলছে। ওসি জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের হলে তদন্ত ও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খুলনা মহানগরীতে গলা কেটে খুন
একই রাতে খুলনার হরিণটানা থানাধীন রাজবাধ দক্ষিণপাড়ায় মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফেরার পথে বালু ব্যবসায়ী বাবলু দত্তকে দুর্বৃত্তরা ধাওয়া করে পাশের একটি ফাঁকা জমিতে নিয়ে গিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
হরিণটানা থানার ওসি শেখ খায়রুল বাসার জানান, বাবলু দত্ত বালু ও জমির ব্যবসায়ী ছিলেন। পুলিশের প্রাথমিক ধারনা, হত্যার পেছনে জমি সংক্রান্ত বিরোধ বা চাঁদাবাজির কারণে ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয় সূত্র বলছে, নিহত সাব্বির, গুলিবিদ্ধ সাদ্দাম ও মিরাজ খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেনেড বাবু গ্রুপের সদস্য ছিলেন। তারা মিটিং করছিলেন বলে খবর পেয়ে প্রতিপক্ষ আশিক গ্রুপ তাদের ওপর গুলি চালায়। গোলাগুলির এই সংঘর্ষে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
খুলনা জেলায় সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অপরাধের হার ও সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ১১টি খুন, ১১টি ধর্ষণ এবং ৩০৯টি অপরাধের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। ১০ মে থেকে ৯ জুনের মধ্যে নদী, খাল ও জনবহুল স্থান থেকে ১৩টি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, অধিকাংশের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

আমজনতার দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও খুলনা জেলার আহ্বায়ক সাংবাদিক মো. সাইফুল্লাহ বাবু বলেন,”খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মারাত্মক অবনতির পথে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে রয়েছে। মাদকের বিস্তার, কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান ও চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গ হচ্ছে। আমাদের দাবি, প্রশাসন যেন রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়।”

খুলনা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়,”অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক প্রভাব, সন্ত্রাসী গ্যাং এবং মাদক ব্যবসার কারণে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। আমরা জনগণের নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে সক্রিয় থাকবো।”