ওষুধ কেনায় অনিয়মের কারণে চলতি বছর সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয় নগরবাসী
নভেম্বরে ফের উৎপাত বৃদ্ধির আশংকা
এ এইচ হিমালয় : খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মশার ওষুুধ কেনাবেচা নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। মানহীন মশার ওষুধ কেনার কারণে চলতি বছরের শুরুতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন নগরীর মানুষ। কেসিসির পক্ষ থেকে মশকনিধনে জোরালে অভিযান চালানো হলেও কাজ হয়নি। নি¤œমানের ওষুধের কারণে মশা নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
আগামী নভেম্বর মাস থেকে শুরু হওয়া মশার প্রজনন মৌসুমকে সামনে রেখে আগেভাগেই তৎপরতা শুরু করে কেসিসি। এজন্য তিন হাজার লিটার অ্যাডাল্টি সাইট কেনা হয়েছে। গত ৩০ আগস্ট কেসিসির গ্যারেজে ওই ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, ফগার মেশিন দিয়ে ধোঁয়া ছিটানোর পর একটি মশাও মারা যায়নি। তাৎক্ষণিক ওই ওষুধ ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। ওষুধ ফেরত নিয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর আরও তিন হাজার লিটার নতুন এনেছে ঠিকাদার। সেই ওষুধ এখনও পরীক্ষা হয়নি। দৈবচয়নের ভিত্তিতে একটি ড্রাম থেকে ওষুধ পরীক্ষা করে গ্রহণের দাবি জানিয়েছে নগরবাসী।
কেসিসি থেকে জানা গেছে, মশক নিধনে কেসিসি দুই ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে। উড়ন্ত মশা বা বড় মশা মারার জন্য ফগার মেশিনের সাহায্যে ধোয়া ছেটানো হয়। মশার লার্ভা বা ডিম মারার জন্য উন্মুক্ত স্থানে লার্ভি সাইট বা কালো তেল ব্যবহার করা হয়। আবহাওয়া পরিবর্তনের সময়টা মশার প্রজনন মৌসুম ধরা হয়। সাধারণত ফেব্রæয়ারি মার্চ ও অক্টোবর-নভেম্বর মাসে মশার উৎপাত বাড়ে।
আগামী শীত মৌসুমে উড়ন্ত মশার নিধনের জন্য গত আগস্ট মাসে নতুন ওষুধ কিনেছে কেসিসি। দিনা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই ওষুধ সরবরাহ করে। ওষুধে কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য ৩০ আগস্ট সিটি করপোরেশনের যানবাহন গ্যারেজে কৃত্রিম মশক নিধনের আয়োজন করা হয়। সেখানে ফগার মেশিন দিয়ে সাইপারমেথ্রিন ১০ ইসি মশার ওপর প্রয়োগ করা হয়। দেখা যায়, নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পরও একটি মশাও মারা যায়নি। তাৎক্ষণিক কেসিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ আসিফ রহমান ওই ওষুধ ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘এই ওষুধ ফেরত নিয়ে আগামী তিন দিনের মধ্যে নতুন ওষুধ এনে পরীক্ষা করতে হবে। ওই ওষুধও যদি পরীক্ষায় ফেল করে তাহলে কার্যাদেশ বাতিল হবে।’
নির্দেশ অনুযায়ী ঠিকাদার মশার ওষুধ ফেরত নিয়ে গেছে। গত সপ্তাহে তিনি তিন হাজার লিটার নতুন ওষুধ দিয়েছেন। পরীক্ষা না হওয়ায় সেই ওষুধ এখনও গ্রহণ করা হয়নি।
সূত্রটি জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই মশার ওষুধসহ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা মালামাল কেনাকাটায় একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। গাড়ির তেলসহ এই খাত থেকে বিপুল অংকের টাকা লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। অতীতে কখনো সাংবাদিকদের নিয়ে উন্মুক্ত পরিবেশে মশার ওষুধ পরীক্ষা করা হয়নি। যার কারণে ওষুধের মান কেমন-জানা যায়নি। এবার সবার সামনে ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষা করায় পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। আগামীতে প্রতিটি ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের নিয়ে পরীক্ষা করে মালামাল বুঝে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে নগরবাসী।